নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের ডাবল লাইন প্রকল্পের জন্য গতকাল মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ রেলষ্টেশন এলাকার দুই শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। তবে তালিকায় থাকলেও এসময় উচ্ছেদ করা হয়নি প্রভাবশালী এমপির শশুরের নিয়ন্ত্রনাধীন স্থাপনা। এ প্রকল্পের কাজ পাওয়া ‘পাওয়ার চায়না লিঃ’ তাদের সাইড অফিস নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। তবে তারা তাদের অফিস নির্মাণের জন্য ভেঙ্গে ফেলছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া বন্যা প্রতিরোধ দেয়াল।
গতকাল সকাল এগারোটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এ উচ্ছেদ অভিযান চলে। এসময় ছোট ছোট বস্তিঘর, দোকান, গ্যারেজ, হোটেলসহ দুই শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদ হওয়া বস্তি ঘরের বাসিন্দা আব্দুল আউয়াল জানান, উচ্ছেদের সময় রেলওয়ের লোকজন জানায় চাষাঢ়া রেলষ্টেশন থেকে পশ্চিমদিকের সত্তরফুট পর্যন্ত জায়গা রেলওয়ের। ডাবল লাইনের জন্য তারা এ উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু উচ্ছেদের সময় দেখা গেলো আমাদের যাদের কোনো প্রভাবশালী লোক নেই তাদের ঘর, দোকান উচ্ছেদ হলো। কিন্তু এমপি শামীম ওসমানের শ্বশুর সাইফুদ্দিন সাহেবের ১০৩ শতাংশ জায়গার একটা ঘরও উচ্ছেদ করা হয়নি।
একই সাথে মঙ্গলবার চাষাঢ়া রেলষ্টেশনের পূর্বপাশে এ প্রকল্পের কাজ পাওয়া ‘পাওয়ার চায়না লিঃ’ তাদের সাইড অফিস নির্মাণের জন্য বেশ কিছু স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। সেখানে তাদের অফিস নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। চলছে পুরনো লাইনের পাশে দেয়াল নির্মানের কাজও। তবে এ অফিসের নির্ধারিত জায়গার পাশে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মাণ করা বন্যা প্রতিরোধ দেয়ালও ভেঙ্গে ফেলছিলো পাওয়ার চায়নার ফোরম্যানের নিয়োজিত লোকজন। নিয়ে যাচ্ছিলো এ দেয়ালের ভেতরে থাকা রড। ১৯৮৮ সালের বন্যার পরে বন্যার পানি যাতে ডিএনডি বাধের ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে ও রেললাইনের উপর না উঠে যায় সেজন্য এ দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছিলো।
এ দেয়ালের ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এডভোকেট এবি সিদ্দিক বলেন, এ দেয়ালটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আজ বন্যা নেই বলে এটির গুরুত্ব কম। কিন্তু বন্যা কখনো দেখা দিলে এ দেয়াল দরকার হবে। তাই ডাবল লাইনের জন্য এ দেয়াল না ভেঙ্গে বরং দেয়াল পর্যন্ত উঁচু করে তাদের অফিস নির্মাণ করতে পারে। প্রয়োজনে রেললাইনও ঐ দেয়াল পর্যন্ত উঁচু করতে পারে।
এসব ব্যাপারে রেলওয়ের বিভাগীয় এষ্টেট অফিসার ওহিদুন্নবী মঙ্গলবার বিকেলে জানান, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের ডাবল লাইন প্রকল্পের কাজের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার চাষাঢ়া রেলষ্টেশন সংলগ্ন প্রায় দুই শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। প্রকল্পের মালামাল অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই এখানে চলে আসবে। সেসব মালামাল রাখার জন্যই জায়গা খালি করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা প্রতিরোধ দেয়াল ভেঙ্গে ফেলার ব্যাপারে তিনি বলেন, এ দেয়াল ভাঙ্গা হয়নি। দেয়াল পর্যন্ত অফিস নির্মাণ করা হচ্ছে। এমপি শামীম ওসমানের শ্বশুরের স্থাপনা উচ্ছেদ না করার ব্যাপারে তিনি বলেন, এটির ব্যাপারে আদালতে মামলা রয়েছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ কারনে এটি উচ্ছেদ করা হয়নি। সম্প্রতি কালিরবাজার এলাকায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চারটি দোকান উচ্ছেদ করেছে রেলওয়ে জানালে তিনি বলেন , এখন একটি মিটিংয়ে ঢুকছি পরে কথা বলবো।
এ ব্যাপারে কথা বলতে জামতলা হায়দার আলী রোডে অবস্থিত এমপি শামীম ওসমানের শ্বশুর সাইফুদ্দিন সাহেবের বাসায় গেলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, সাইফুদ্দিন সাহেব এখানে নেই। তিনি সাইফুদ্দিন সাহেবের ফোন নাম্বার দিতেও অস্বিকৃতি জানান। তবে তিনি জানান, ঐ জায়গা সাইফুদ্দিন সাহেবের ব্যক্তিগত। অল্প কিছু জায়গা রেলওয়ের লিজ ছিলো। সে জায়গা ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
৩৭৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যায়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের রেল যোগাযোগের ডাবল লাইন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। ২০১৫ সালের ২০ জানুয়ারী এ প্রকল্পটি একনেকের অনুমোদন পায়। এ বছরের ২০ জুন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চীনা কোম্পানীটির সাথে চুক্তি হয়। এ রুটের আগের লাইনের পাশাপাশি আরেকটি ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ করা হবে। মূল রেল লাইনের দৈর্ঘ্য হবে ১২ দশমিক ১ কিলোমিটার এবং লুপ লাইন ৫ কিলোমিটার। এ ছাড়া এ রেলপথে ২টি বক্স কালভার্ট, ৭টি স্লাব ব্রিজ, ২টি স্টিল কম্পোজিট গার্ডার ব্রিজ, ৫টি স্টেশন ভবন, ১০টি প্ল্যাটফরম, ১০টি প্ল্যাটফরম সেড, ৪টি ফুটওভার ব্রিজ, আগের লাইন উঁচুকরন, অফিস ও আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হবে। এ রেলপথে লেভেল ক্রসিং গেইট থাকবে ১২টি। ২০১৯ সালের ৩০ জুনের মধ্যে এর কাজ শেষ হবে।
রেলওয়ের বিভাগীয় এষ্টেট অফিসার ওহিদুন্নবী আরো জানান, বর্তমানে রাজধানী ঢাকা ও পাশের নারায়ণগঞ্জ অত্যন্ত জনবহুল এলাকা। ঢাকা শহরের নিত্যনৈমিত্তিক যানজটে মানুষ অতিষ্ঠ। পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ, জয়দেবপুর ও সংশ্লিষ্ট শহরতলীগুলোতেও যানজটের তীব্রতা অসহনীয় হচ্ছে। এ অবস্থায় যানজট কমাতে সরকার ঢাকা এবং পাশের শহরগুলোর মাঝে দ্রুত যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বেশকিছু উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডাবল লাইন প্রকল্প অন্যতম। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে বর্তমানে প্রতিদিন ৩২টি (১৬ জোড়া) ট্রেন চলাচল করে। ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আরও বেশি ট্রেন চালানো সম্ভব হবে এবং বিশ মিনিটে ট্রেন চলাচল করতে পারবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।